সাদা ও কালো

সাদা ও কালো

সাদা আর কালো নিয়ে ইদানীং বেশ এক প্রস্থ কথা হল। যদিও সোশাল মিডিয়ার রাজনৈতিক চর্চিত স্থান কারণ ছিল এক বর্তমান আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষ আর দুই বহুদিনের পরিচিত ক্রিম ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির নাম পরিবর্তন। প্রথম ও দ্বিতীয় ফাঁসি নিয়ে জনগণের সন্ধান। আমার সেই সব নিয়ে নতুন কিছু করা নেই। তবে এই বিষয়ে আমার লম্বা লম্বা কিছু রাখা বা বলা ভালো তথ্য আরোহণ আর সেই বিষয়ে আমার চিন্তাই ধরতে চাই।

যদি সভ্যতার দিকে তাকান তবে সেখানে দেখা যাবে কিন্তু সেখানে আদি বলতে মহাশূন্য এবং মূলধারাকারী দেবী হিসাবে দেবী চণ্ডী, কালিকা এঁদের কাছে আছে। আবার যখন পরবর্তী কাল বিগ ব্যাং থিওরি আসে সেখানেও বলা হয়েছে যে মহাশূন্য থেকে তাও কিন্তু কালো বা কৃষ্ণ।

আর দেশও আদিনিবাসী স্বপক্ষে অনার্য বলা হয় যারা তাদের উত্তর কালের সাম্রাজ্য আর দেবতাদের সাথে পূর্ণ একত্র করা হয়েছে। অনেক অনেক মাটি মাটিতে আর নার্য্যদের মিশে যাওয়ার মতনই। যদিও এখন একটা বড় অংশ প্রোপান্ডান্ডা বানায় যে আর্য বৈধতা থেকে ভারতে আসে। ইতিহাস ইতিহাস আর গবেষণা সে কথা বলে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত যাবরদের এক অংশ এই আর্য যারা মাটিতে মাটির সাথে আদি মানুষদের মিশে যান। আর বৈদিক সভ্যতাও এঁদের দান। আর দুই মহাকাব্যে এই মিশ্রন প্রকিয়াটি বেশ ভালো করা হয়েছে। দেখতে থেকে ধর্মনা মেরে ঠুলি পেশ সাহিত্য ও গবেষনার পাঠ করা হবে তবে সেই সব সুস্পষ্টভাবে দেখা যাবে। যদিও সেই সংমিশ্রণ ও মহাকাব্যের কথা অন্য কোন আইন বলে। আপাতত ফিরে আসি সাদা আর কালোয়।

আর এখানেও অন্য প্রতি প্রতিপাদ্যে যাওয়ার আগে এই মহাকাব্যের কিছু প্রধান চরিত্রের গাত্র বর্ন নিয়ে কিছু হবে না। কৃষ্ণ, যমুনার দ্বীপে মৎসগন্ধ্যা (তখনও পর্যন্ত সত্যবতী এইপন্থী পরিচিত ছিলেন) ও ঋষি পরশের সন্তানের জন্ম হল তাও মহাদ্বৈপায়ন। আর গাত্র বর্নের জন্য সে কৃষ্ণ পরবর্তী বিন্যাস করেন বেদব্যাস। আবার তাঁর নাতিদের দিকে যদি তাকানো যায় তবে অর্জুনের সাধারণ রঙও কালো। আর মহাভারতের প্রধান চরিত্র স্বয়ং কৃষ্ণও কালোই। আবার দ্রৌপদীও কালো তাই সে কৃষ্ণা যদিও মহাভারতের অনেক সমালোচক মনে করেন যে সে কৃষ্ণের বন্ধু বলে কৃষ্ণা কিন্তু আদতে তা না যজ্ঞেদী থেকে উত্থানের সময়ে তাঁর গাত্রবর্ণের উল্লেখ আছে। সেখানে সে কৃষ্ণা। মূল মহাভারত ও মহাভারতের সমালোচক কিন্তু বল্লেও বর্তমান টিভির এঁদের কে সাদা না বলা ভাল ক্যাটকেটে ফার্সা দেয়। এখানেই প্রশ্ন আসে কেন? একী চির স্থায়ী বা বলা ভাল দুশ বছর আগে প্রভুদের জন্যে সাদা সাদা করতে হবে? যদিও টিভি যুগের প্রথম রামায়ন বা মহাভারতে এই চরিত্রগুলিকে ফর্সা করা হয়নি। এমনকি উত্তর ভারতে জন্মানো রামচন্দ্র নিজেও ফর্সা করেছিলেন না তাঁকে দূর্বাদলের নীল এখানে লেখা হয়েছে কি তাঁর ফর্সা না গণ্য করা ইঙ্গিতই বোঝাচ্ছে না?

আর ভারতবর্ষের মানুষদের রঙ ফর্সা বার্তা বাদামী আভা সহ। যার মূল কারণ অবশ্যই জলবায়ু আর প্রাকৃতিক অবস্থান।

এত গেল সাহিত্য আর মানুষদের রংয়ের কথা। যদি আমরা গবেষনা জানাতে পারি তবে যীশুর বর্তমান রঙ বাদামীই বলা হচ্ছে। যদিও আমরা চিরকালই যীশুকে ফর্স দেখতেই অভ্যাসত। প্রকৃতপক্ষে বলা হচ্ছে যে দেশটির জন্ম ইউরোপের দেশ না যেখানে সে দেশের মানুষের যৌবনের রং ফ্যাটফর্সা হয় একটি বাদামী আভা থাকে। তাহলে তিনি ফরসা কী করবেন? এখানে বলা হচ্ছে যে তাকে ফরসা করা হয়েছে অনেক পরে। যখন তিনি খ্রীষ্ট ধর্মের কথাবার্তা বলতে আমি তখনকার মানুষদের নিজের গাত্র বর্ননা তাঁকেও ফর্সা করেছে।

আমাদের গৌতমবুদ্ধকেও দেখতে হয়। কারণ উপমহাদেশের মানুষগুলি দেখতে তার শব্দ মূর্তি আমরা জানি তা কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ভিডিওটি দেখতে দেখতে দেখতে বৌদ্ধ মানুষের সাথে মিলিত হয়। আর এই মিল করাটা অস্বাভাবিক কিছু না।

সাহিত্য, দর্শন ইত্যাদি ছেড়ে আমরা বিজ্ঞানের দিকে তাও কিন্তু বলা হয়েছে যে আদি যে মূল চামরা তাও কৃষ্ণ বর্নের। চামরার রং যত সাদা হবে আদতে তা খারাপের প্রভাব।

আর এর পরে এর পরে যে আমির পরেও মানুষের মনে কবে 'ফর্সা' হিরিক পরে আর ফর্সা না হলে সে খারাপ বা কালো ছেলে-মেয়েদের (বিশেষত মেয়ে) সমস্যা কথা জিনিস বার বার পরে। এ সময়ে সময়েও কিন্তু সেই সময়টানিও।

আবার আমরা যে আমেরিকার ক্ষমতা বলে সেখানেও যদি দেখা যায় যে আদি আমেরিকার মানুষ কিন্তু কালোরই হবে। সেই উপমহাদেশের খোঁজে ঘোষণাও দেওয়া যাবে সেই আমেরিকো ভেসপুচি কিন্তু সাদা প্রতীকর। তবে বারংবার কী সেই সাদা আর কালোর দন্দ্ব এসেছে প্রভু আর দাসে চক্করে?

সর্ব দেবদেবীরা নিজেরাই কৃষ্ণবর্নের। সাহিত্যে যত লেখালেখি না কেন 'কৃষ্ণে কলি আমি তাঁকে বলি যার কালো হরিণ' আদতে আদিকতাই আদিকই মানুষরা কী বারংবার দাস আর প্রভুর পরে বারংবার অন্যের বর্নবিদ্বেষের দেখা না?

প্রশ্ন থেকে যায় এখানেই তবে কেন আর কীসের জন্য আমাদের মধ্যেও সদা কার এই বিভেদ। আজকে যারা আমেরিকার নাগরিক নিন্দায় আছেন তারা নিজের জন্য অনেক পছন্দ করেন। এবং এই ধরনের কাজটি সহজ হতে পারে। শান্তিপূর্ণ বন্ধ হবে প্রশ্ন প্রশ্নই। যদিও সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলা দুষ্কর।

(এখানে যে সব মহাকাব্যের কথা উল্লেখ আছে সেগুলি মহাকাব্য ও তাঁর পাঠ ব্যাখ্যামূলক লেখা পড়াই বলা হয়েছে)।

স্ক্রিপ্ট রায়

ব্লগে ফিরে যান